কোয়েল পাখির ডিমের উপকারিতা ও অপকারিতা

কোয়েল পাখির ডিম অত্যন্ত পুষ্টিকর এবং শরীরের জন্য অনেক উপকারী। এতে প্রোটিন, ফ্যাট , কার্বোহাইড্রেট, ক্যালসিয়াম,আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, পটাশিয়াম, সোডিয়াম, জিংক, ফলেট, ভিটামিন (এ, বি-১২, ই, ডি) এবং কোলেস্টেরল রয়েছে। এই উপাদানগুলো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে, শরীরকে সুস্থ রাখে এবং রক্ত থেকে ক্ষতিকর টক্সিন দূর করতে সহায়ক। কোয়েল পাখির ডিম নিয়মিত খাওয়ার মাধ্যমে শরীরের সামগ্রিক স্বাস্থ্য উন্নত করা সম্ভব। 

কোয়েল পাখির ডিমের স্বাদ মুরগির ডিমের মতোই, তবে এগুলি আকারে ছোটো । সাধারণত একটি মুরগির ডিমের এক- তৃতীয়াংশ। এই ডিমের খোসা ক্রিম রঙের এবং তাতে বাদামি ছোপ থাকে, আর কুসুম গারো হলুদ রংয়ের। 

কোয়েল পাখির ডিমের পুষ্টিগুণ 

কোয়েল পাখির ডিম ভিটামিন ও খনিজের প্রাচুর্য। এতে রয়েছে আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, পটাশিয়াম, সোডিয়াম, জিংক , থায়ামিন, নিয়াসিন, ভিটামিন বি-১২, ভিটামিন বি-৬, ভিটামিন-এ এবং ভিটামিন-ই আছে।

এটি গর্ভাবস্থায় ও শিশুর জন্মগত সমস্যা প্রতিরোধে বিশেষ ভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এটি শিশুর হাড় গঠনেও দারুন ভাবে কার্যকর। 

চিকিৎসকদের মতে, কোয়েলের ডিমপুষ্টি গুণের দিক থেকে এগিয়ে আছে সবচেয়ে বেশি। বিভিন্ন রোগ যেমন: পুরুষত্বহীনতা, কিডনী সমস্যা, স্মৃতিশক্তি হ্রাস, রক্তস্বল্পতা, ডায়াবেটিস প্রভৃতি রোগের জন্য উপকারি বলে বিবেচিত। 

  1. মুরগির ডিমের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায় কোয়েলের ডিমে কোলেস্টেরল ১.৪% আর মুরগির ডিমে ৪% এবং প্রোটিনের পরিমাণ মুরগির ডিম থেকে প্রায় শতকরা ৭ ভাগ বেশি।
  2. এই ডিমের মধ্যে প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেল, এনজাইম এবং এমাইনো এসিড এমনভাবে বিন্যাসিত যে এই ডিমে শরীরের সব ধরনের পুষ্টির অভাব পূরণ করে এবং শরীরের কর্মদক্ষতা বাড়িয়ে দেয়।
  3. কোয়েলের ডিমে ভিটামিন বি-১ এর পরিমাণ মুরগির ডিম থেকে ছয় গুণ বেশি, আয়রন ও ফসফরাস পাঁচ গুণ বেশি, ভিটামিন বি-২ পনেরো গুণ বেশি।
  4. কোয়েলের ডিমে এমন কিছু উপাদান আছে যা শরীরের মধ্যে এন্টিবডি তৈরি করে।
  5. বাচ্চাদের মানসিক, শারীরিক এবং বুদ্ধিমত্তার বিকাশ ঘটাতে সহায়তা করে থাকে কোয়েলের ডিম। দুর্বল বাচ্চা থেকে বৃদ্ধরা প্রতিদিন তিন-চারটা করে কোয়েলের ডিম খেতে পারেন।

প্রধান পুষ্টি উপাদান

প্রোটিন:-

কোয়েলের ডিম উচ্চ মাত্রার প্রোটিনসমৃদ্ধ। প্রতি ১০০ গ্রাম কোয়েলের ডিমে প্রায় ১৩ গ্রাম প্রোটিন থাকে। যা দেহের কোষের গঠন, ক্ষয়পুরণ এবং পেশী বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

ভিটামিন:-

কোয়েলের ডিমে ভিটামিন-এ, বি-২, বি-৬, বি-১২, এবং ডি প্রচুর পরিমাণে থাকে। 

ভিটামিন-এ: চোখের স্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজনীয়। 

ভিটামিন-বি কমপ্লেক্স: মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি এবং স্নায়ুর স্বাস্থ্য রক্ষায় সহায়তা করে। 

ভিটামিন ডি: হাড় মজবুত রাখতে ক্যালসিয়ামের শোষণে সাহায্য করে। 

মিনারেলস বা খনিজ:-

কোয়েলের ডিমে আয়রন, ফসফরাস, পটাশিয়াম এবং জিংক থাকে। 

আয়রন: রক্তে হিমোগ্লোবিন উৎপাদনে সহায়তা করে এবং রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধ করে। 

ফসফরাস: হাড় ও দাঁতের গঠনে গুরুত্বপূর্ণ। 

পটাশিয়াম: রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। 

জিঙ্ক: রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং ত্বকের স্বাস্থ্য উন্নত করে। 

চর্বি ও ক্যালরি:-

কোয়েলের ডিমে কোলেস্টেরলের পরিমাণ কম, যার হৃদ রোগের ঝুঁকি হ্রাস  করে। প্রতিটি কোয়েলের ডিমে প্রায় ১৪ ক্যালরি থাকে। যা ওজন নিয়ন্ত্রণে কার্যকর। 

স্বাস্থ্য উপকারিতা:-

ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করা 

কোয়েলের ডিমে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন এ শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। যদি সর্দি কাশি, ইনফেকশন ও সাধারণ ঠান্ডা জনিত সমস্যা প্রতিরোধে সহায়ক।

এলার্জি ও প্রদাহ কমানো 

কোয়েলের ডিমে ওভোমুকোইড নামে একটি প্রোটিন থাকে যা এলার্জি প্রতিরোধে কার্যকর। এটি প্রদাহ জনিত সমস্যা ও হ্রাস করে। 

হৃদযন্ত্রের সুরক্ষা 

এই ডিমে থাকা ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড এবং পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। 

ত্বক ও চুলের যত্ন 

কোয়েলের ডিমে থাকা ভিটামিন এ এবং জিঙ্ক ত্বক উজ্জ্বল রাখে এবং চুলের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। 

মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি 

ভিটামিন বি১২ এবং কৌলিন মস্তিষ্কের স্মরণশক্তি ও মনোযোগ বাড়াতে কার্যকর। এটি স্নায়ু সুরক্ষা এবং মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতে সহায়তা করে। 

খাওয়ার নিয়ম 

কোয়েলের ডিম সাধারণত সেদ্ধ, ভাজা বা রান্না করে খাওয়া হয়। ডিম ভাজার সময় অতিরিক্ত তেল ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ অতিরিক্ত তেল দিলে ডিমের পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়। তবে অতিরিক্ত খাওয়াই এড়িয়ে চলা উচিত। কারণ এটি অতিরিক্ত কোলেস্টেরল এবং ফ্যাটের কারণে ক্ষতিকর হতে পারে। 

শিশুদের জন্য কোয়েল পাখির ডিমের উপকারিতা:-

কোয়েল পাখিরে ডিম শিশুর স্বাস্থ্য উন্নয়নে কার্যকর। ভিটামিন এবং খনিজের এক প্রাকৃতিক উৎস, যার মধ্যে রয়েছে আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস , পটাশিয়াম সোডিয়াম,  জিংক ,থায়ামিন, রিবোফ্লাভিন , ভিটামিন বি-৬ বি-১২, ভিটামিন এ ও ই। এসব উপাদান শিশুদের হাড়ের গঠন, শারীরিক বৃদ্ধি এবং মস্তিষ্কের বিকাশে সহায়ক। কোয়েল পাখির ডিম শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং জন্মগত সমস্যা গুলি প্রতিরোধে সাহায্য করে। এটি শিশুর সুষম পুষ্টি নিশ্চিত করে এবং স্বাস্থ্যকর বৃদ্ধির জন্য অপরিহার্য। 

গর্ভাবস্থায় কোয়েল পাখির ডিমের উপকারিতা:-

কোয়েল পাখির ডিম গর্ভাবস্থায় অত্যন্ত পুষ্টিকর খাবার। এতে ভিটামিন এবং খনিজের প্রাচুর্য রয়েছে, যেমন: আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস , পটাশিয়াম, সোডিয়াম , থায়ামিন ভিটামিন বি-১২, ভিটামিন এ ও ই। এইসব উপাদান গর্ভবতী মায়েদের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে, পাশাপাশি শিশুর জন্মগত সমস্যা প্রতিরোধে সাহায্য করে। কোয়েল পাখির ডিম শিশুর হাড় গঠনে সহায়ক এবং গর্ভাবস্থায় মা ও শিশুর সুষ্ঠু বিকাশ নিশ্চিত করে। 

কোয়েল পাখির ডিমের অপকারিতা:-

যদিও কোয়েল পাখির ডিম পুষ্টিকর, তবে এটি অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়ায় স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। অধিক কোয়েল পাখির ডিম খেলে উচ্চকোলেস্টেরল এবং প্রোটিনের মাত্রা বৃদ্ধি হতে পারে, যা হৃদ রোগ এবং কিডনি সমস্যা তৈরি করতে পারে। এছাড়াও কিছু মানুষ কোয়েল পাখির ডিমের প্রতি এলার্জি প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে। গর্ভবতী মহিলা এবং শিশুদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ডিম খাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। সঠিক পরিমাণে খাওয়া উচিত এবং প্রয়োজনের চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

নিউ সেবা বিডি নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url